নিজস্ব প্রতিবেদক : ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে তেল ও গ্যাসের দাম নিয়ে সারাবিশ্ব টেনশনে। তখন বাংলাদেশ আগের তুলনায় অনেকটা কম দামে এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, জুলাই ২৭-২৮ তারিখের এলএনজি আমদানির দরপত্র ২২ জুন খোলা হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা দর জমা দিয়েছিলেন প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫ দশমিক ৪৫ ইউএস ডলার। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই রিটেন্ডার করা হয়। দুই দিনের ব্যবধানে ২৪ জুন সর্বনিম্ন দর পাওয়া গেছে ১৩ দশমিক ৫২ ডলার। ইউনিট প্রতি ১ দশমিক ৯৩ ডলার কম দর প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এতে করে স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা এক কার্গোতে এলএনজিতে ৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের দরপত্রে সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো বিপি, ভিটল, গুনভরসহ মোট ৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরমধ্যে সর্বনিম্ন দর দিয়েছেন ভিটল এশিয়া সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। নতুন দর প্রস্তাব ২৫ জুন ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে তোলা হবে বলে জানা গেছে। পেট্রোবাংলার ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, জুলাই ১৫-১৬ সময়ের কার্গোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তাতে সর্বনিম্ন দার পাওয়া যায় ১৫ দশমিক ১৭ ইউএস ডলার, আমরা সেখানেও রিটেন্ডার করে ৫৭ সেন্টস করে কম দর পেয়েছি। অনেক ঝুঁকি নিয়েই রিটেন্ডার করা হয়, উভয়ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সাশ্রয় হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দিয়ে অনেকের কপালে চিন্তার ভাজ দেখা গেলেও দু’টি দরপত্রের পর বেশ স্বস্তিতে রয়েছে পেট্রোবাংলা। অর্থাৎ সাশ্রয়ী দরে জুলাই মাসের এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২৪ জুন এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমাদের জ্বালানি তেল ও এলএনজির সোর্স মধ্যপ্রাচ্য হলেও অনেক সরবরাহকারি রয়েছে যারা সিঙ্গাপুর থেকে, কেউ মালয়েশিয়ার মার্কেট থেকে সরবরাহ করেন। সে কারণে তেলের সরবরাহ নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। তবুও আমরা যুদ্ধের ওপর নজর রাখছি। এখনই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই। এক সময় দেশীয় গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেত। মজুদ কমে আসায় উৎপাদন ১৯০০ মিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে। গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় ২০১৮ সাল থেকে জিটুজি ভিত্তিতে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে খোলাবাজার থেকেও এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়। এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত ৪৮৭ কার্গো (১ কার্গো ৬১ হাজার ৫০০ মে. টন) এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২৬৭ কার্গো, ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ওমান থেকে ১২২ কার্গো এবং স্পর্ট মার্কেট থেকে ৯৮কার্গো আমদানি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৭৭ কার্গো আমদানি করা হয়েছে, এরমধ্যে স্পর্ট মার্কেট থেকে ৩১ কার্গো। ২০২০ সালে স্পর্ট মার্কেটে ৬ থেকে ৭ ডলারে পাওয়া যেত প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে এলএনজির দাম। বাধ্য হয়ে ২০২৩ সালের আগস্টে খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে বাংলাদেশ। কিছুদিন পর আবার আমদানি শুরু করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম পড়েছে ১০ দশমিক ৬৬ ডলার ও ওমান থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছে ১০ দশমিক ৯ ডলার। বর্তমানে প্রতিশ্রুত গ্রাহকের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে প্রকৃত চাহিদা বিবেচনা করা হয় ৪০০০ মিলিয়নের মত। যার বিপরীতে আমদানিসহ কমবেশি ২৮০০ মিলিয়ন সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। বড় একটি অংশ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রতিদিনেই।
Posted ৬:১১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta